জুলাইযোদ্ধাকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ দিয়ে নিয়োগ আটকানোর অভিযোগ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের জুনিয়র অফিসার (গ্রেড-১০) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তুষার। ৬৭ জনের তালিকার প্রথমেই ছিল তার রোল নম্বর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিয়োগপত্র পাননি।

 

তুষারের অভিযোগ, রাজনৈতিক ট্যাগের কারণে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরিতে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি ফল প্রকাশের পর ২২ জুলাই নিয়োগপত্র ইস্যু হলেও তা তার হাতে পৌঁছেনি। ১২ আগস্ট ওই পদে অন্যরা যোগদান সম্পন্ন করলেও তিনি পারেননি।

 

তুষারের অভিযোগ, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে তাকে চাকরিতে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইঙ্গিত দেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ থাকতে পারে। কেউ কেউ ধারণা দেন, হয়তো প্রতিবেদনে তাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

তবে আশরাফুল এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত— তা প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েছি, পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলে আহত হয়েছি। ২০১৮ সালের নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ডাকসু আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। সেই আমাকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া কীভাবে সম্ভব?’

 

তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও শেখ হাসিনার আমলে তিনি তিনটি সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, যদিও ব্যক্তিগত কারণে যোগ দেননি। ‘তখন কোনো সমস্যা হয়নি, এখন নতুন বাংলাদেশে এভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

 

আশরাফুলের দাবি, এ ঘটনার কারণে তিনি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে বাবা-মায়ের অসুস্থতা এবং পারিবারিক দায়িত্বের কারণে চাকরিটি তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, তিনি টিউশনি ও ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন, আর গ্রামের বাড়ির কৃষিজমি থেকে কিছু অর্থ আসে।

 

সাধারণ বীমা করপোরেশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরূপ কোনো মন্তব্য থাকতে পারে এবং সাধারণত এ ধরনের প্রতিবেদনকে আমলে নেওয়া হয়।’ কী লেখা আছে, তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না।

 

তুষার ইতোমধ্যে করপোরেশনের এমডি, জিএম ও ডিজিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। ৭ আগস্টের চিঠিতে তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন পুনরায় করার অনুরোধ জানান। এর আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানও নিয়োগপত্র প্রাপ্তির বিলম্বের বিষয়টি সদয় বিবেচনার অনুরোধ করে করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, বোর্ড সভায় আলোচনার আগে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

 

উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকার চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আশরাফুলের অভিযোগ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাস্তবে এখনো গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রভাব বহাল রয়েছে।

 

ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে আশরাফুল লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের হাতে মার খাওয়া আর পুলিশের টিয়ারশেল খাওয়ার হিসাব দিলে তা উপন্যাস হবে। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে অনলাইন থেকে রাস্তায় সব জায়গাতেই ছিলাম। সেই আমাকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া বা নিয়োগপত্র না দেওয়া— এটা কীভাবে সম্ভব, তা আমার মাথায় আসে না। ক্ষমতাধর কেউ এই অন্যায়কে আমলে নিচ্ছেন না।’  সূএ:  বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অটোচালকসহ দুজন নিহত

» আবারও রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম

» পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

» টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ডাবল সেঞ্চুরি

» ছেলের বন্ধুরা আমাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী

» কিছু আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর চাইছে: সালাহউদ্দিন

» গাজায় গণহত্যা চলছে, দায়ী ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ১১২৬ জন আসামি গ্রেফতার

» ফখরুল-আব্বাসসহ ৬৭ জনকে অব্যাহতি দিলো আদালত

» জামায়াতের আন্দোলন সরকারবিরোধী না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জুলাইযোদ্ধাকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ দিয়ে নিয়োগ আটকানোর অভিযোগ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের জুনিয়র অফিসার (গ্রেড-১০) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তুষার। ৬৭ জনের তালিকার প্রথমেই ছিল তার রোল নম্বর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিয়োগপত্র পাননি।

 

তুষারের অভিযোগ, রাজনৈতিক ট্যাগের কারণে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরিতে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি ফল প্রকাশের পর ২২ জুলাই নিয়োগপত্র ইস্যু হলেও তা তার হাতে পৌঁছেনি। ১২ আগস্ট ওই পদে অন্যরা যোগদান সম্পন্ন করলেও তিনি পারেননি।

 

তুষারের অভিযোগ, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে তাকে চাকরিতে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইঙ্গিত দেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ থাকতে পারে। কেউ কেউ ধারণা দেন, হয়তো প্রতিবেদনে তাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

তবে আশরাফুল এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত— তা প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েছি, পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলে আহত হয়েছি। ২০১৮ সালের নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ডাকসু আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। সেই আমাকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া কীভাবে সম্ভব?’

 

তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও শেখ হাসিনার আমলে তিনি তিনটি সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, যদিও ব্যক্তিগত কারণে যোগ দেননি। ‘তখন কোনো সমস্যা হয়নি, এখন নতুন বাংলাদেশে এভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

 

আশরাফুলের দাবি, এ ঘটনার কারণে তিনি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে বাবা-মায়ের অসুস্থতা এবং পারিবারিক দায়িত্বের কারণে চাকরিটি তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, তিনি টিউশনি ও ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন, আর গ্রামের বাড়ির কৃষিজমি থেকে কিছু অর্থ আসে।

 

সাধারণ বীমা করপোরেশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরূপ কোনো মন্তব্য থাকতে পারে এবং সাধারণত এ ধরনের প্রতিবেদনকে আমলে নেওয়া হয়।’ কী লেখা আছে, তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না।

 

তুষার ইতোমধ্যে করপোরেশনের এমডি, জিএম ও ডিজিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। ৭ আগস্টের চিঠিতে তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন পুনরায় করার অনুরোধ জানান। এর আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানও নিয়োগপত্র প্রাপ্তির বিলম্বের বিষয়টি সদয় বিবেচনার অনুরোধ করে করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, বোর্ড সভায় আলোচনার আগে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

 

উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকার চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আশরাফুলের অভিযোগ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাস্তবে এখনো গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রভাব বহাল রয়েছে।

 

ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে আশরাফুল লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের হাতে মার খাওয়া আর পুলিশের টিয়ারশেল খাওয়ার হিসাব দিলে তা উপন্যাস হবে। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে অনলাইন থেকে রাস্তায় সব জায়গাতেই ছিলাম। সেই আমাকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া বা নিয়োগপত্র না দেওয়া— এটা কীভাবে সম্ভব, তা আমার মাথায় আসে না। ক্ষমতাধর কেউ এই অন্যায়কে আমলে নিচ্ছেন না।’  সূএ:  বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com